যেমন করে চাই তুমি তাই/কামদেব - অধ্যায় ৪৪

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-27911-post-2137124.html#pid2137124

🕰️ Posted on July 4, 2020 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1009 words / 5 min read

Parent
।।৪৪।।           ড.রিয়াজ সাহেব বিছানায় পড়তে না পড়তে ঘুমে কাদা। নাদিয়া বেগমের চোখে ঘুম নেই। সেই সকালে গেল,এত রাত হল ফেরার নাম নেই। পাশে মানুষটা কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে দেখে গা জ্বলে যায়। গায়ে ঝাকি দিয়ে বলেন, আপনে ঘুমাইলেন নাকি? — না ঘুমাই নাই,কি বলতেছো বলো। রিয়াজ সাহেব রাগ করেন না। — এত কামাইতেছেন, আপনের টাকা কে খাইবো সেইটা ভাবছেন? — এই রাতে কি সেইটা ভাবনের সময়? অখন ঘুমাও। কান্না পেয়ে যায় নাদিয়া বেগমের,বাপ হয়ে কি করে এমন নির্বিকার থাকে মানুষ ভেবে পান না। মেয়েটারই বা কি আক্কেল একটা খবর দিতে তোর কি হয়েছে? মেয়েটা হয়েছে বাপ ন্যাওটা। মামুনে গেছে তো গেছে– চিন্তায় ছেদ পড়ে নাদিয়া বেগমের,বেল বাজলো না? হ্যা কলিং বেলই তো বাজছে। ধড়ফড় করে উঠে বসেন।নীচে গেট খোলার শব্দ হয়। বাইরে বেরিয়ে  দরজার কাছে গিয়ে কান পেতে জিজ্ঞেস করেন,কে-এ-? বাইরে থেকে সাড়া দিল,মাম্মি আমি। দরজা খোলো। এতো মণ্টির গলা। বুকের কাছে হৃৎপিণ্ডটা লাফিয়ে ওঠে। খুলছি মা খুলছি বলে দরজা খুলে দিলেন। গুলনার ঢুকেই মাকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলে। ‘ মাগো জানোয়ারগুলো আমাকে ছিড়ে খেয়েছে। ‘ নাদিয়া বেগম স্তম্ভিত। হায় আল্লা! কথাটা বার বার মনে উকি দিলেও বিশ্বাস হয়নি কে জানতো তাই সত্যি হবে। মামুন ব্যাগ নিয়ে পাশের ঘরে চলে যায়। নাদিয়া বেগম কলের পুতুলের মত মেয়েকে জড়িয়ে ধরে থাকেন। কি বলে সান্ত্বনা দেবেন মুখে ভাষা যোগায় না। জড়িয়ে ধরে বসার ঘরে নিয়ে গিয়ে মেয়েকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বলেন,কাঁদিস নে মা– চুপ কর– চুপ কর। পুলিশ কিছু করল না? — জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একজন মহিলা,উনি ধরেছেন সব কটাকে। — কিছু খেয়েছিস? — হ্যা,আমরা খেয়ে বেরিয়েছি। আমি আর খাবো না। ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করো। — না, এত রাতে আমিও খাবো না। মামুন বলেন। — একটা ফোন তো করতে পারতিস? — তোমাদের বিরক্ত করতে চাইনি। কিইবা করতে তোমরা? ডিএম সাহেবা যথেষ্ট করেছেন। — এবার শুয়ে পড়। জার্নি করে এলি। নাদিয়া বেগম একটু অবসর খুজছিলেন। বিছানায় উঠে বালিশে মুখ গুজে হু-হু করে কেদে ফেললেন। মনে হল কে পিঠে হাত রাখল। পাশ ফিরে দেখলেন ডাক্তার সাহেব। নাদিয়া স্বামীর বুকে মুখ গুজে দিলেন। — আহা শান্ত হও। এখন কাদলে কি হবে কও? ডা.রিয়াজ সাহেব বলেন। — আপনে ঘুমান নাই? — তোমরা আমারে কি ভাবো বলো দেখি? আমি টাকার পিছনে কি নিজের জন্য ছুটি? তুমি যদি অবুঝের মত কাঁদো তাইলে মন্টির মনে হবে ও বুঝি কোন অপরাধ করছে? তুমি না মা? সন্তানের শেষ আশ্রয় তার মা। ও তো কোন অপরাধ করে নাই। ড.রিয়াজ পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বিবিরে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। ডিএম সাহেবা বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করেন।এই অফিসে বলু আর কয় দিন।বলুর প্রতি তার এত আসক্তি আগে টের পান নি।কি আছে বলুর মধ্যে যা তাকে এত আকুল করে।কাছে নেই তবু জানেন অফিসে ঢোকার মুখে টুলে বসে থাকবে বলু। ভোরে ঘুম ভাঙ্গে নাদিয়ার,চোখ মেলে মনে হয় আজকের সকাল অন্যান্য দিনের থেকে আলাদা। পা টিপে টিপে উকি দিলেন মেয়ের ঘরে। কেমন শান্ত ফুলের মত মেয়েটা, অজান্তে চোখে জল চলে আসে। করিম চা নিয়ে আসে। নাদিয়া জিজ্ঞেস করেন,বাজার আনছস? — এইবার যামু। — দে চা আমারে দে,তুই বাজারে যা। ভাল মাছ আনবি। কতদিন পর দিদি আসছে। চায়ের ট্রে হাতে দিয়ে করিম বলে,জ্বি। নাদিয়া ট্রে নামিয়ে রেখে আচল দিয়ে চোখ মুছলেন। তারপর নীচু হয়ে মেয়েকে ডাকলেন,ওঠ মা,বেলা হইছে। চা আনছি। গুলনার উঠে বসে পাশে রাখা ঘড়ি দেখে বলে,কত বেলা হইল তুমি ডাকো নাই কেনো? — বেলা হইছে তো কি হইছে? — আমার কাজ আছে,মুন্সিগঞ্জ যাইতে হবে। ড.রিয়াজ ঢুকে জিজ্ঞেস করেন,ভাল আছিস তো মা? — বাবা তোমারে বলি নাই,আমার মুন্সিগঞ্জ স্কুলে বদলি হইছে। — তাই নাকি? এতো ভাল খবর। শোনো বাসে যাওনের দরকার নাই। গাড়ি নিয়া যাও, আমি নাহয় ট্যাক্সি নিয়া নিমু আমি ইউসুফমিঞারে বইলা দিতেছি। নাদিয়ার এই বন্দোবস্তো ভাল লাগে না। স্বামীকে একান্তে পেয়ে বলেন,আপনে এইটা কি করলেন? — খারাপ কি করলাম? কাজের মধ্যে থাকলে মনটা ভাল থাকবে। চার ঘণ্টার পথ মুন্সিগঞ্জ। ইউসুফ চাচা গাড়ি চালানোর সময় কথা বলেনা। খুব তাড়া নাই ধীরে গিয়ার বদলায়ে বদলায়ে সতর্কভাবে স্টিয়ারিং ধরে থাকে। এত ধীরে গাড়ি চালানো মামুনের পছন্দ না। গাড়ি স্কুলের কাছে এসে পৌছালো তখন প্রায় সাড়ে-এগারোটা। বালিকা বিদ্যালয় হলেও অফিস স্টাফ সবাই পুরুষ। পরিচয় পেয়ে একটি ছেলে গুলনারকে হেডমিস্ট্রেসের কাছে নিয়ে গেল। ভদ্রমহিলা গম্ভীর প্রকৃতি, কথা কম বলেন। কাগজ পত্তর দেখে একবার গুলনারের আপাদ মস্তক দেখে বলেন,আজই জয়েন করবেন? — জ্বি,আমি পরশু থেকে জয়েন করতে চাই। তার আগে একটা থাকার ব্যবস্থা করে নি। — সুদেব তুমি ওনারে কিছু সাহায্য করতে পারবে? — জ্বি,আসেন ম্যাডাম। সুদেব শুনে বলদেবের কথা মনে পড়ল। কি করছে এখন কে জানে? নিজের কাছে না-আনা অবধি স্বস্তি পাচ্ছে না গুলনার। সুদেবকে জিজ্ঞেস করেন,ভাই আপনের কোন জানাশুনা আছে? — ম্যাডাম একখান ঘর পাওয়া মুস্কিল। আমাদের এখানে যখন আসছেন,একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে– । — না,আমার দুই রুমের ফ্লাট চাই। ভাড়ার জন্য চিন্তা করবেন না। — দুই রুম? অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে হইলে চলবে? তিনতলায়? — স্কুল থেকে কতদুর? — আপনে যদি এদিক-ওদিক দেখতে দেখতে হাটেন তাইলে দশ মিনিট। গুলনার হেসে ফেলে বলেন,চলুন গাড়ি নিয়ে যাই। — এইটুক পথ গাড়ি যেতে চাইবে না। — ঐ গাড়িতে উঠুন। সামনে গাড়ি দাড়িয়েছিল সুদেবের নজরে পড়ে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,আপনে গাড়ি নিয়ে এসেছেন? সুদেব ড্রাইভারের পাশে বসে। বাস্তবিক বেশি দূর নয়,হলুদ রঙের নতুন বাড়ি। বাড়ির নীচে অফিস সেখানে গিয়ে কথাবার্তা বলে অগ্রিম টাকা দিয়ে চাবি নিয়ে নিলেন গুলনার। একটা রেস্টোরন্টের কাছে গাড়ি থামাতে বলেন গুলনার। তারপর সুদেবকে বলেন,নামুন এককাপ চা খাই। সুদেব স্কুলের জুনিওয়র কেরানী। বছর চারেক এই স্কুলে আছে কিন্তু একজন দিদিমণির কাছে থেকে এমন সহৃদয় ব্যবহার আগে পায় নি। নাদিয়া সব কথা শুনে আকাশ থেকে পড়েন। তার মনে হয় সব কিছুর জন্য দায়ী ড.রিয়াজ। স্বামীকে বলেন,আপনের জন্য মেয়েটার আজ এই অবস্থা। গুলনারকে বলেন, তোর কত টাকা দরকার তুই বল?স্বামীকে বলেন,শুনছেন আপনের  মাইয়া বাড়িতে থাকবো না। ঘর ভাড়া নিয়া থাকবো। আমাগো লগে থাকতে তোর অসুবিধা কি? — আমি প্রতি সপ্তাহে আসবো। এইখান থিকা গেলে প্রতিদিন সময় মত পৌছাইতে পারুম না। — এই মাইয়া আমারে পাগল কইরা দিবো। — আঃ দুইদিন যাক আস্তে আস্তে ঠিক হইয়া যাইবো। ও তো বলতেছে আসবো– ।রিয়াজ সাহেব সামাল দিতে চেষ্টা করেন। — আমার কুন কথা কারো শুননের আবশ্যক নাই,তোমরা যা খুশি কর,আমারে কিছু বলতে আসবা না। নাদিয়া চলে যান,বাপ মেয়ে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করে। ড.রিয়াজ বলেন,মা তুমি চিন্তা করবা না। আমি ভাল ছেলের লগে তোমার বিয়া দিমু। — বাবা,তুমি অখন চেম্বার থিকা ফিরলা? এইভাবে চললে শরীর থাকবো। — আইসাই শাসন? এই ভয় পাইতেছিলাম। ড.রিয়াজ মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন। গুলনার বাবার বুকে মাথা রাখেন। দেবের কথা কিভাবে বলবে বাবাকে? ড মামুনের হয়েছে মুষ্কিল আপুরে কথা দিয়েছে পরে জানাজানি হলে আম্মু তারে দোষারোপ করবে।
Parent