যেমন করে চাই তুমি তাই/কামদেব - অধ্যায় ৫৮

🔗 Original Chapter Link: https://xossipy.com/thread-27911-post-2151827.html#pid2151827

🕰️ Posted on July 8, 2020 by ✍️ kumdev (Profile)

🏷️ Tags:
📖 1192 words / 5 min read

Parent
।।৫৮।।              উত্তরা থেকে নেমে পথে এসে দাঁড়ায় বলদেব।ফুরফুরে বাতাস লাগে গায়ে। খেয়াল করলো না উপর থেকে একজন জুলজুল করে তাকিয়ে আছে অবিমিশ্র মুগ্ধতায়। বলদেব অনুভব করে মৌয়ের লালার গন্ধ জড়িয়ে সারা মুখে। বিদেশে নিয়ে থিসিস করাবে মৌ বলছিল। প্রস্তাব লোভনীয় কিন্তু রাজী হবেনা মণ্টি। রাস্তার ধারে একটা পানের দোকানে গিয়ে বলে,একটা পান দিবেন ভাই। — কি পান? কি বলবে বলদেব,তার পান খাবার অভ্যাস নেই। ভেবে বলে, একটা গন্ধ আলা পান? — ও বুঝছি,জর্দা পান? আতকে ওঠে বলদেব,না না জর্দা না, মিঠা পাতি জর্দা ছাড়া। পান অলা মুখের দিকে চায় কি বুঝলো কে জানে একটা পান সেজে এগিয়ে দিল। বলদেব পান মুখে পুরে জিভ দিয়ে ঘুরিয়ে পানের রস পান করে। মনে হয় কেউ আর তার মুখে মদের গন্ধ পাবে না। একটা হাহাকারের বেদনা বহন করছে মৌ। বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। মানুষের মন পাতালের মত,উপরটা দেখে বোঝা যায় না নীচে প্রতিনিয়ত চলছে কি ভাঙ্গাচোরা। স্বামিকে ফেলে পড়ে আছে বিদেশ বিভুয়ে একা একা। মৌয়ের কথা ভেবে মায়া হয়। কিইবা করার আছে তার? মৌসমের বুকের মধ্যে হাহাকার। অবাক হয় ছেলেটা কোন ধাতুতে গড়া চোখের সামনে মেলে দেওয়া ঐশ্বর্য একবার ফিরেও দেখল না। অপমানিত বোধ করলেও আকর্ষণ তীব্রতর হয়। সামনে রিক্সা পেয়ে থামিয়ে উঠে পড়ল বলদেব। রিক্সাওলা পিছন ফিরে দেখল একবার। সে কি গন্ধ পেয়েছে? আজ রাতে আম্মুর কাছাকাছি গিয়ে কথা বলবে না। রিক্সা বাড়ির কাছে পৌছাতে ভাড়া মিটীয়ে নেমে পড়ল। উপর দিকে দেখল বারান্দায় কেউ নেই। স্বস্তি বোধ করে। এত রাতে থাকার কথাও না। ভিতরে ঢুকে সিড়ি দিয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠছে। গত সপ্তাহে মণ্টি আসে নাই। হয়তো কাজের চাপ পড়ে থাকবে। এই সপ্তাহে যদি না আসে তাহলে রেজাল্ট বেরোলে মুন্সিগঞ্জ যাবে। এই সপ্তাহে রেজাল্ট বেরোবার কথা। উপর দিকে নজর পড়তে চমকে ওঠে বলদেব। সিড়ির উপরে কে দাঁড়িয়ে? ভুল দেখছে না তো? উপরে উঠে হেসে জিজ্ঞেস করে,তুমি কখন আসলে? — এইটা কি হোটেল মনে করছেন? যখন ইচ্ছা যাইবেন যখন ইচ্ছা আসবেন? — হোটেলেও একটা নিয়ম আছে। আর হোটেলে পয়সা দিতে হয়। বলদেব সহজভাবে বলে। — এত জানেন যখন তখন সেইভাবে থাকলেই হয়। গুলনার কথাটা বলেই ডাইনিং রুমের দিকে চলে গেলেন। মনে হয় রাগ করেছে মন্টি।রাগলে মাথার ঠিক থাকে না উলটাপালটা  কথা বলে। বলদেব পিছন পিছন গিয়ে ডাইনিং রুমে দেখল একটা প্লেটে খাবার ঢাকা দেওয়া রয়েছে। বলদেব জিজ্ঞেস করে,তুমি খাবে না? — আমার কথা আপনের না ভাবলেও চলবে। — তা হলে আমিও খাবো না। — মাঝরাতে আর রঙ্গ করতে হবে না। পানির গেলাস এগিয়ে দিয়ে বলেন,খাইতে ইচ্ছা হইলে খান। হঠাৎ নাক কুচকে বলদেবের দিকে সন্দিগ্ধ দৃষ্টি মেলে জিজ্ঞেস করেন, আপনে কোথায় গেছিলেন বলেন তো? এত উন্নতি হয়েছে? হায় মারে! বলে গুলনার নিজের ঘরে ঢুকে গেলেন। — মণ্টি শোনো তুমি যা ভাবছো তা ঠিক না মণ্টি– মণ্টি প্লিজ– । গুলনার দাড়াল না। কিছুক্ষন স্থির দাঁড়িয়ে থাকে বলদেব। ক্ষিধেও পেয়েছে,প্লেট নিয়ে খেতে বসে। রাগ হওয়া স্বাভাবিক। এতদিন পরে এল কিন্তু যার জন্য আসা সে বাসায় নেই। মৌসমের ফ্লাটে না গেলে এই বিপত্তি হত না। খেয়েদেয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে। শুনেছে মৌসমের কণ্ট্রাক্ট শেষের দিকে আর বাড়াতে চায় না। দেশ ছেড়ে আবার চলে যাবে কিন্তু স্বামীর কাছে নয়। কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছে না। মানুষের মন বড়ই জটিল। কবির ভাষায় ‘অর্থ নয় কীর্তি নয় ভালবাসা নয় আরো এক বিপন্ন বিস্ময়– । ‘বাউল গানের একটা পদ ‘কোথায় পাবো তারে আমার মনের মানুষ যে রে। ‘মনের মানুষের সন্ধানে কেটে যায় জীবন তবু সন্ধান হয় না অবসান। বলদেব নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে “কি চাও,কেন এই অস্থিরতা? ” মেলে না কোন স্পষ্ট উত্তর।তবু মনের মধ্যে অস্থিরতা সারাক্ষন তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়।খাওয়া শেষ হতে করিম ঢুকলো। বলদেব জিজ্ঞেস করে,তুমি খাও নি? — জ্বি হইছে। মেমসাব বললেন,টেবিল পরিস্কার করে ঘুমোবি। বলদেব উঠে পড়ে। আজ আর আম্মুর সাথে দেখা হলনা। সকালে দেখা করলেই হবে। বেসিনে মুখ ধুতে গিয়ে আয়নায় নিজের মুখ দেখতে পেল। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে প্রতিবিম্বের দিকে। সে কি বদলে যাচ্ছে? কাল যে বলদেব ছিল আজ কি সে আছে? আজ যতটুকু বদলেছে তার জন্য দায়ী কে? সব কিছুর পিছনে মণ্টির সযত্ন প্রয়াস সে কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। মণ্টি না থাকলে আজও তাকে সরকারী অফিসের পিয়ন হয়ে দিন কাটাতে হত। খড়কুটোর মত ভেসে ভেসে চলছিল জেনিফার আলম তাকে দেখালেন নতুন জীবনের দিশা। তার কথাও আজ আর তেমন মনে পড়েনা। একসময় প্রতিদিন দেখা হত কথা হত। জীবন বড় বিচিত্র, পরের সিড়িতে পা রাখতে আগের সিড়ি থেকে পা তুলে নিতেই হবে,না-হলে একই জায়গায় থাকতে হবে স্থির। কি করছেন এতক্ষন? কাত হয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছেন গুলনার। এত সময় লাগে খেতে? চাষার মত কাড়ি কাড়ি খায়,এমন বেহায়া। মনে হল এখন ঢুকলো। মটকা মেরে পড়ে থাকেন গুলনার। বলদেব ঢুকে দেখল মণ্টি শুয়ে আছে বিছানায়, ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি? লাইট জ্বালতে গিয়েও সুইচ থেকে হাত সরিয়ে নিল। অন্ধকারে পোষাক বদলায়। আজকের কথা সব বলবে মণ্টিকে, তার কাছে কোন কথা গোপন করা ঠিক না। বিছানায় উঠে পাশে শুয়ে আদরের সুরে ডাকে,মণ্টি ঘুমিয়ে পড়লে? কোন সাড়া পাওয়া গেলনা। বলদেব মনে মনে হাসে,তারপর বলে,জানো ড.এমবি কথা দিয়েছেন আমাকে থিসিস করার সুযোগ দেবেন। আমারে খুব পছন্দ করেন। গুলনারের গা জ্বলে যায়। এই এমবি তাহলে মৌসম? বড় মুখ করে আবার তার কথা বলছে? মানুষটাকে মনে হয়েছিল যত সহজ সরল এখন বুঝতে পারছেন সে সব ভান। মণ্টির ইচ্ছে সে অধ্যাপনা করুক। এই খবরটা দিলে খুব খুশি হবে ভেবে পাশ ফিরে ডান হাত দিয়ে কাধ ধরে বলে,মীরপুরের একটা কলেজে– । কথা শেষ হবার আগেই এক ঝটকায় বলদেবের হাত সরিয়ে দিয়ে বলেন,গায়ে হাত দিবেন না। মাঝরাতে মাতালের প্রলাপ ভাল লাগতেছে না। — প্রলাপ না সত্যি– । — আমারে কি ঘুমাইতে দিবেন? ঝাঝিয়ে ওঠেন গুলনার। বলদেব বুঝতে পারে মণ্টি গন্ধ পেয়েছে।মাতাল বলল কেন?মনে হচ্ছে পানে কাজ হয়নি মিচিমিছি এক গণ্ডা পয়সা নষ্ট। যদি শোনে মৌসমের অনুরোধে একটু পান করেছে তাহলে আর দেখতে হবে না। এখন ঘুমাক, মণ্টিকে আর বিরক্ত করবে না। সকাল হলে রাতের গ্লানি দূর হয়ে যাবে। তখন বুঝিয়ে বললেই হবে। মণ্টি জানে তার দেব বানিয়ে কথা বলতে পারে না। ভোর হল,ঘুম ভেঙ্গে গুলনার দেখলেন পাশে শায়িত বলদেব।স্কুলের আলোচনা মনে পড়তে  ঘেন্নায় সারা শরীর রি-রি করে উঠল। বিছানা ছেড়ে বাথরুমে ঢুকলেন। করিম চা নিয়ে ঢূকতে দেখল অপা বেরোবার জন্য প্রস্তুত। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, অখন কই যান? চায়ের কাপ নিয়ে গুলনার বলেন,জরুরী কাজ আছে। মুন্সিগঞ্জ যাওন লাগবো। আম্মুরে কিছু বলতে হবেনা। — কাল তো সবে আসলেন,আইতে না আইতে কি কাম পড়লো? চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে গুলনার বলেন,তোরেও সেই কৈফিয়ত দিতে হবে? আমি আসি। গুলনার বেরিয়ে গেলেন। অপার ম্যাজাজটা কেমন যেনি তিরিক্ষে হইয়া গ্যাছে করিম বুঝতে পারে। বলদেবের একটু বেলায় ঘুম ভাঙ্গে করিমের ডাকে। বলদেব মণ্টিকে দেখতে না পায়ে জিজ্ঞেস করে,মণ্টি কোথায় রে? — আপনের ফুন আসছে। অপা জরুরী কামে গ্যাছে। বলদেব উঠে ফোন ধরে। ওপার থেকে মৌয়ের গলা পাওয়া গেল,বাড়ি ফিরতে অসুবিধে হয়নি তো? — না। এই জন্য ফোন করলেন? — খবর আছে। — খবর? — হ্যা,তুমি পাস করেছো,ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। বলদেবের ভ্রু কুচকে যায় বলে,রেজাল্ট কি বেরিয়ে গেছে? — দু-একদিনের মধ্যে বেরোবে। ভিতর থেকে জেনেছি। বলদেব কথা বলেনা। মণ্টি এমন দিনে চলে গেল। — কি ভাবছো? একদিন এসো– কথা আছে। ফোন রেখে দিতে দেখল করিম দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করে, আমাকে চা দিবি না? — আপনের চা নাস্তা দিছি মায়ের ঘরে। মায়ে আপনেরে ডাকে। চোখ মুখ ধুয়ে বলদেব নাদিয়া বেগমের ঘরে গেল। বলদেবকে দেখে নাদিয়া বেগম বলেন,আসো বাবা আসো। মন্টি কই গেল তোমারে কিছু বলে নাই? — জরুরী কাজে গেছে। — সেইটা কেমুন কথা? সন্ধ্যায় আইল আবার ভোর না হইতে বাইর হইয়া গেল। তাইলে আসনের দরকার কি? — নিশ্চয়ই কিছু জরুরী কাজ পড়েছে– । — মন্টি বরাবর জেদী। বাপের আলহাদী মাইয়া। তুমারে শক্ত হইতে হইবো। তুমি শাসন করবা। নাদিয়া বেগম জামাইকে লক্ষ্য করেন, কি যেন ভাবছে বলদেব।আম্মুরে সব কথা বলা ঠিক হবে কি?সেটা ঠিক হবে না মণ্টি শুনলে রাগ করতে পারে।
Parent